আসসালামু আলাইকুম।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু!
তেল বিশ্বের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তেল যখন পেট্রোলিয়ামে রূপান্তিত হয় তখন এটি যানবাহন, বিমান হিটিং এবং বিদ্যুতের ব্যবহৃত একটি শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। এ সকল গুরুত্বপূর্ণ শক্তির উৎস হওয়ার বাইরেও পেট্রোলিয়াম, প্লাস্টিক পেইন্ট, কেমিক্যাল টেপ এবং আরো অনেক কিছুতেই তেল ব্যবহৃত হয়। তেল ছাড়া পৃথিবী কল্পনা করা অনেক কঠিন।
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেল রপ্তানি করে হাজার হাজার কোটি ডলার অর্জন করে থাকে। বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী সবথেকে বড় তিনটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং রাশিয়া। এই তিনটি দেশ ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে, যা সারা বিশ্বের মধ্যে ৪৩ শতাংশ।
বিডি টেক ডায়েরির আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দশটি দেশ নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক
আর্টিকেল সূচি
তেল উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ২০২৪
দেশ | প্রতিদিন উৎপাদন (মিলিয়ন ব্যারেলে) | মার্কেট শেয়ার |
যুক্তরাষ্ট্র | ১৮,৬০ | ১৯% |
সৌদি আরব | ১০,৮২ | ১১% |
রাশিয়া | ১০,৫০ | ১১% |
কানাডা | ৫.২৬ | ৬% |
চীন | ৪,৯৩ | ৫% |
ইরাক | ৪.১৬ | ৪% |
ব্রাজিল | ৩,৮৯ | ৪% |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | ৩,৮৯ | ৪% |
ইরান | ৩,০১ | ৩% |
কুয়েত |
তথ্যসূত্র: developmentaid
যুক্তরাষ্ট্র
এই মুহূর্তে বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন গড়ে ৯,৩৫২,০০০ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে যা বিশ্বের তেল উৎপাদনের মধ্যে ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র গত চার বছর ধরে তেল উৎপাদনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালে রাশিয়া কে পিছনে ফেলে তেল উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। এবং ২০১৭ সালে প্রাক্তন তেল উৎপাদনে শীর্ষ দেশ সৌদি আরব কে পিছনে ফেলে এক নাম্বার অবস্থানে চলে আসেন। আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল উৎপাদনে নতুন সরবরাহে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখবে।
তেলের প্রধান উৎপাদনকারী হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল ব্যবহারে অনেক বড় ভোক্তা।
সৌদি আরব
বিশ্বে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে এক সময় এক নম্বরে থাকা সৌদি আরব বর্তমানে বিশ্বের তেল উৎপাদনে ১২.৪% অবদান রাখছে। সৌদি আরব বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এর প্রথম সদস্য। সৌদি আরব প্রতিদিন ১১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে।
সৌদি আরবের মোট আয়ের সিংহভাগই আসে তেল উৎপাদন এবং রপ্তানি করে। দ্যা ওয়ার্ল্ড ফাস্ট বুক এর তথ্য মতে সৌদি আরবের জিডিপির ৪২ শতাংশ আসে তেল উৎপাদন সেক্টর থেকে। সৌদি আরবের বর্তমান নেতা প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি ভিশন ২০৩০ নামের একটি কর্মসূচিতে তেলের আয়ের উপর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে সৌদি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রাশিয়া
রাশিয়া হলোমবিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ দেশ। যদিও তারা সারিবদ্ধ ভাবে পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে রাশিয়া বিশ্বের তেল সরবরাহের প্রায় ১২ শতাংশ উৎপাদন করেছে। রাশিয়া বর্তমানে প্রতিদিন ১১ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে।
রাশিয়া তাদের উৎপাদিত তেলের বড় একটা অংশ চীন, নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানিসহ ইউরোপের প্রধান বাজারগুলোতে সরবরাহ করে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে রোস্টনেফ্ট এবং গাজপ্রম সহ সরকার সমর্থিত সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস শিল্পের বেশিরভাগই এখন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে ফিরে এসেছে।
also read
কানাডা
তেল উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে থাকা কানাডার বেশিরভাগ তেলের প্রায় ৯৭ শতাংশ পশ্চিমাঞ্চলীয় আনবার্ট প্রদেশের বালুর মধ্যে রয়েছে। ভেনেজুয়েলা এবং সৌদি আরবের পর কানাডায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরিচিত তেলের মজুদ রয়েছে। কানাডা প্রতিদিন ৫.৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে যা মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৬ শতাংশ ।
ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে কানাডার তেল উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে। এই বৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে বালু উৎপাদন থেকে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এই উৎপাদন হবে অনেক ব্যয়বহুল। কিন্তু যাই হোক সমসাময়িক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে খরচ কমিয়ে আনতে পারে। কানাডার তেল উৎপাদনের প্রধান উৎস হল আলবার্টা’র তেল বালু এবং ওয়েস্টার্ন কানাডা সেন্টিমিটার এবং আটলান্টিক অক্সফোর্ড সামুদ্রিক জায়গা।
তেল মজুদে শীর্ষ দেশ
চীন
চীন পঞ্চম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আমাদের এই লিস্টে স্থান পেয়েছে। চীন প্রমাণ করে যে জনসংখ্যার আয়তন এবং একটি জাতির মোট এলাকা তেল উৎপাদনের সাথে খুব একটা সম্পর্ক রাখে না। বরং তেল কোথায় পাওয়া যায় এবং বিশ্বের কোন অংশে কোন দেশগুলো উত্তোলন করতে পারে এবং করতে পারেনা তা নিয়ন্ত্রণ করার জ্ঞানের উপর নির্ভর করে।
চিন যা তেল উৎপাদন করে তার বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উত্তোলন করা হয়।
চীন ২০২০ সালে গড়ে ৪.৮৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে যা বিশ্বের তেল উৎপাদনের ৫ শতাংস। বলা হচ্ছে চিন তেলেট অন্যতম আমদানিকারক কারণ দেশটি ২০১৮ সালে গড়ে ১৩.৮৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পড়ে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল এর ভোক্তা।
ইরাক
ইরাক বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ইরাক প্রতিদিন ৪.১৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে থাকে। যা বিশ্বের মধ্যে ৪ শতাংশ। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাবে ইরাক তাদের আশানুরূপ তেল উৎপাদন করতে পারছে না। ইরাকের অস্থিশীলতার প্রধান কারণ হলো অন্যান্য বড় দেশগুলোর ইরাকের প্রতি কুদৃষ্টির এবং লোভ।
also read
ব্রাজিল
একমাত্র ল্যাটিন আমেরিকার দেশ হিসেবে এই তালিকা অবস্থান করে নিয়েছে ব্রাজিল। ২০২০ সালে ব্রাজিল প্রতিদিন ৩.৮৯ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। যা বিশ্বের মধ্যে প্রায় ৪ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম দেশটি তার অনুসন্ধান ও উৎপাদন শিল্পের রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া অবসান ঘটায়।
ব্রাজিলের রাষ্ট্র সমর্থিত কম্পানি পেট্রোব্রাশ ব্রাজিলের দেশীয় তেল শিল্পে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ব্রাজিলের তেল উৎপাদনের বেশিরভাগই দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের রিও ডি জেনিরোর দক্ষিনে অবস্থিত শান্তস এবং ক্যাম্পস নামক জায়গার গভীর জলে মধ্যে অবস্থিত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিদিন ৩.৮৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেলের মজুদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উৎপাদিত তেল বেশিরভাগই রপ্তানি করা হয় জাপানে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জিডিপির ২৫ শতাংশই আছে তেল উৎপাদন থেকে। ১৯৬৭ সাল থেকে দেশটি ওপেকের সদস্য।
ইরান
ইরান হলো বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠক ওপেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০২০ সালে ইরান প্রতিদিন ৩.০১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। যা বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের ৩%। আন্তর্জাতিকভাবে তেলের ১০ শতাংশ মজুদ থাকা সত্বেও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির প্রতিক্রিয়ার আরোপিত কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তেলের সম্পদের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে সর্বাধিক হারে বৃদ্ধি করতে বাধা দিচ্ছে।
ইরানের তেল এবং গ্যাস এর মজুদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল ইরানি অয়েল কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যার সদরদপ্তর হল রাজধানী তেহরানে।
কুয়েত
কুয়েত হলো বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। এই পশ্চিমা এশীয় দেশটিতে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তেলের উৎপাদনের হার মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যা কুয়েতের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। কুয়েতের মোট জিডিপির ৬০ শতাংশই আসে তেল রপ্তানি থেকে।
তেলের উৎপাদন হ্রাস দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রবাহিত করতে থাকবে যদি না সরকারি কর্মকর্তারা কুয়েতের তেল উৎপাদন হার বাড়ানোর উপায় খুঁজে না পান, অথবা বিনিয়োগের জন্য অন্য কোন শিল্প খুঁজে না পান।
also read
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা গ্রহণ কেমন লেগেছে আজকের এই আর্টিকেলটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন