প্রাকৃতিক গ্যাস কি?

প্রাকৃতিক গ্যাস একটি জীবাশ্ম শক্তির উৎস। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণত প্রাকৃতিক ভাবে মাটির নিচে অথবা পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচে তৈরি হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস কে সাধারণত মিথেন গ্যাস বলা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাস একটি গ্রিন হাউস গ্যাস যা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান মিথেন হলেও এর ভিতরে কিছু পরিমাণ ইথেন, প্রোপেন, উচ্চতর কার্বনযুক্ত অংশ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইট ইত্যাদি থাকে।

বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম একটি খনিজ সম্পদ হলো ন্যাচারাল গ্যাস। প্রাকৃতিক গ্যাস মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করে জীবনযাত্রার মানকে অনেক সহজ করে তুলেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস হলো মানুষের একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যার মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন, রান্নাবান্না করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য ব্যবহার হয়। তাছাড়াও বিশ্বে গ্যাস এখন বিভিন্ন যানবাহনের জ্বালানি এবং প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন এবং রপ্তানি একটি দেশের জিডিপি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উপরে প্রভাব ফেলে। বিডি টেক ডায়েরির আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষ দশটি দেশ নিয়ে।

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ২০২৪

পজিশন দেশ মজুদ(বিলিয়ন কিউব মিটার) BCM
০১ আমেরিকা 914.6 bcm
০২ রাশিয়া 638.5 bcm
০৩ ইরান 250.8 bcm
০৪ চীন 194 bcm
০৫ কাতার 171.3 bcm
০৬ কানাডা 165.2 bcm
০৭ অস্ট্রেলিয়া 142.5 bcm
০৮ সৌদি আরব 112.1 bcm
০৯ নরওয়ে 111.5 bcm
১০ আলজেরিয়া 81.5 bcm
১১ মালয়েশিয়া 73.2 bcm
১২ ইন্দনেশিয়া 63.2 bcm
১৩ তুর্কমেনিস্তান 59 bcm
১৪ মিশর 58.5 bcm
১৫ সংযুক্ত আরব আমিরাত 55.4 bcm
১৬ নাইজেরিয়া 49.4 bcm
১৭ উজবেকিস্তান 47.1 bcm
১৮ যুক্তরাজ্য 39.5 bcm
১৯ আর্জেন্টিনা 38.3 bcm
২০ ওমান 36.9 bcm
২১ থাইল্যান্ড 32.7 bcm
২২ কাজাখস্তান 31.7 bcm
২৩ পাকিস্তান 30.6 bcm
২৪ মেক্সিকো 30.1 bcm
২৫ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো 29.5 bcm
২৬ আজারবাইজান 25.8 bcm
২৭ বাংলাদেশ 24.7 bcm
২৮ ব্রাজিল 23.9 bcm
২৯ ভারত 23.8 bcm
৩০ নেদারল্যান্ড 20 bcm

তথ্যসূত্র: wisevoter.com

 

আমেরিকা

বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে শীর্ষ দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। আমেরিকার কাছে বর্তমানে ১৫,৪৮৪ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের রিজার্ভ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রাকৃতিক গ্যাসের অধিকাংশই টেক্সাস অক্লাহমা এবং লুইজিয়ানা থেকে উৎপাদিত করা হয়। অনুমান করা হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুপৃষ্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে যা কমপক্ষে আরও ৬০ বছর বা তার বেশি সময় থাকতে পারে। আমেরিকা
নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি কানাডা, মেক্সিকো ও ফিলিপাইন থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানি করে থাকে ।

 

রাশিয়া

বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে ২য় শীর্ষ দেশ হলো রাশিয়া। রাশিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ আছে। বর্তমানে রাশিয়ার কাছে ৪৭,৮০৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের মজুদ আছে। এবং বর্তমানে রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কারক। রাশিয়া প্রতি বছর আনুমানিক ১৯৬ বিলিয়ান ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানি করে থাকে। রাশিয়া তাদের গ্যাসের বেশিরভাগই অটোমেটিক সেক্টরে ব্যবহার করে থাকে।

ইরান

এই মুহূর্তে গ্যাস উৎপাদনে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ হলো ইরান। ইরানের প্রায় ৩৩,৭২১ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। ইরান হলো পৃথিবীর অন্যতম হাইড্রোকার্বন সমৃদ্ধ অঞ্চল। ইরানের প্রায় ১৪৫ টি হাইড্রোকার্বন ক্ষেত্র এবং ২৯৭ তেল ও গ্যাসের জলাশয় আবিষ্কৃত হয়েছে। এবং আগামীতে দেশটিতে আরও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্র ও জলাধার আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান যেহেতু বর্তমানে তার গ্যাস রিজার্ভ এর ছোট একটি অংশ উৎপাদন করছে তাই বলা যায় তারা ভবিষ্যতে অনেক বেশি পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।আগামীতে ইরানের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিতে বিশ্বে শীর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে ১০ নম্বর অবস্থানে আছে চীন । বর্তমানে চীনের কাছে ৫৪৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের রিজার্ভ আছে। গত ২০ বছরে চীনের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ প্রায় ৫০ গুণ বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার, উৎপাদন এবং আমদানি নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও চীন সবেমাত্র তার দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণ করেছে মাত্র।

আরো পড়ুন: তেল উৎপাদনে শীর্ষ দেশ ২০২৪

কাতার

বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে তৃতীয় সর্ববৃহৎ দেশ হলো কাতার। কাতারের কাছে প্রায় ২৪,০৭২ ঘনমিটার গ্যাস রিজার্ভ আছে কাতার বিশ্বের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভ এর ১৪% সরবরাহ করে। দেশটির প্রাকৃতিক গ্যাসের অধিকাংশ রিজার্ অফশোর নর্থ ফিল্ডে অবস্থিত। কাতারের বর্তমান লক্ষ্য হলো পৃথিবীতে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি তে নিজেদের শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্থানটি পুনরুদ্ধার করা। বর্তমানে কাতার নর্থ ফিল্ডে ড্রিলিং সম্প্রসারণ শুরু করে এবং তাদের উৎপাদন ৬০ শতাংশ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

 

কানাডা

 

অস্ট্রেলিয়া

 

সৌদি আরব

সৌদি আরব পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদক। সৌদি আরবের কাছে বর্তমানে ৯,২০০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস মজুদ রয়েছে। সৌদি আরবের প্রাকৃতিক গ্যাস এর অধিকাংশই পারস্য উপসাগর থেকে উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক হলো সৌদি আরব। অন্যান্য দেশের মতো সৌদিআরব ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করার পরিকল্পনা শুরু করেছে। যদিও সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে তেলের উপর নির্ভরশীল।

 

নরওয়ে

 

তুর্কমেনিস্তান

তুর্কমেনিস্তানের কাছে বর্তমানে ৭,৫০৪ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে। তুর্কমেনিস্তান বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। তুর্কমেনিস্তান হলো বর্তমানে ষষ্ঠ বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ । তুর্কমেনিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে দেশটির পূর্বাঞ্চলের আমুদরিয়া অববাহিকায় অবস্থিত। ২০১৫ সালে তুর্কিমিনিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাসের ৭০ শতাংশ চীনে রপ্তানি হয়েছিল। তুর্কিমিনিস্তান চীনের সাথে গ্যাস রপ্তানিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা বর্তমানে চলমান আছে।

আরো পড়ুন: পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দশ দেশ 202৪

সংযুক্ত আরব আমিরাত

বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনুমানিক ৬,০৫১ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জিডিপির প্রায় ৩০% গ্যাস এবং তেল উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। ২০২০ সালের প্রথম দিকে আবুধাবি এবং দুবাই এর মধ্যে একটি প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। যেখানে ৮০ ট্রিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট গ্যাস রয়েছে।

ভেনিজুয়েলা

বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে দেশ হল ভেনিজুয়েলা। ভেনেজুয়েলার কাছে ৫,৪৭৫ বিলিয়ন গ্যাস মজুদ রয়েছে। ভেনিজুয়েলা বিশ্বের মোট গ্যাস রিজার্ভ ৩% সরবরাহ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে ভেনিজুয়েলার পশ্চিম গোলার্ধে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাসের মজুদ রয়েছে এই ভেনিজুয়েলায়। অপর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো মূলক সমস্যার কারণে ভেনেজুয়েলা তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের সবটা ব্যবহার করতে পারছে না।

নাইজেরিয়া

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে নবম স্থানে আছে নাইজেরিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সর্ব প্রথমে আছে তারা । নাইজেরিয়ার কাছে ৫,৪৭৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রয়েছে। ভবিষ্যতে নাইজেরিয়া প্রচুর পরিমানের খনিজ সম্পদ উৎপাদন করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের বাজারে সেরা স্মার্ট ফোন ব্রান্ড ২০২৪

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৭ তম। এবং এশিয়ার মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম। বাংলাদেশের বৃহৎ আকারের গ্যাসক্ষেত্র সর্বশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হওয়ার জায়গা হচ্ছে গভীর সমুদ্র। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কখনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এর জন্য অনুসন্ধান চালানো হয়নি।

প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে ভারতের অবস্থান কত?

বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের অবস্থান ২৯ তম যা ২০১৭ সালে ২২ তম অবস্থানে ছিল।

 

বিনামূল্যে টেকনোলজিক্যাল রিসোর্স পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হন

 

কেমন লেগেছে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে করা আজকের এই আর্টিকেলটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে রেগুলার ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ!