আসসালামু আলাইকুম
বিডি টেক ডায়েরি এর আরও একটি নতুন পোস্টে আপনাকে স্বাগতম।
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু।

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হাডুডু হলেও কালের পরিক্রমায় এখন ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট এখন বাঙালির প্রাণ, বাঙালির আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের কাছেই এখন ক্রিকেট প্রিয় খেলা। দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেদল শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ দল ওয়ানডে মর্যাদা পায় ১৯৮৫ সালে এবং টেস্ট মর্যাদা অর্জন করে ২০০০ সালে। শুরু লগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা কিছু অর্জন নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল।

 

১. অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ছয়টি অর্জন

Celebrating moment before winning

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব থেকে বড় অর্জন হল অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ জয়! কারণ যে কোন স্তরের ক্রিকেটে কোন বৈশ্বিক টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ জয় এটি।১৬ দলের অংশগ্রহণে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২১ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশে। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয় বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলী। এছারাও দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে আলোচনায় আসে মাহমুদুল হাসান তৌহিদ রিদয়ের মত উদিয়মান ক্রিকেটাররা।

২. ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি

আইসিসি ট্রফি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে, চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এটা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক বড় অর্জন এবং প্রথম আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ট্রফি জয়। কেনিয়ার দেয়া ২৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির কারণে ডার্কওয়াস লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের টারগেট দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৪৭ রান। খালেদ মাসুদ পাইলট এর ৭০ রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

৩. নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারানো

১৯৯৯ সালের নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকে দেয় বাংলাদেশ। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ শাহরিয়ার হোসেন,আকরাম খান এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের করা ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংসে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২২৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। ২২৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৬১ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

সে ম্যাচে খালেদ মাহমুদ সুজন দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। ১০ ওভার বল করে ৩১ রান করে তুলে নিয়েছেন তিনটি উইকেট। সেইসাথে বাংলাদেশ ৬২ রানের বিশাল জয় পায়। দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

৪. ২০০৭ বিশ্বকাপে ইন্ডিয়াকে হারিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয়া

২০০৭ বিশ্বকাপ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য স্বপ্নের মত। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পায়। গ্রুপ পর্বে ইন্ডিয়া কে হারিয়ে টুনামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয় বাংলাদেশ।

টস জিতে ইন্ডিয়া প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায়। ১৯২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২৪ রানের মাথায় ১ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে মুখে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ফিফটিতে চাপের মুখ থেকে বেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচে সাকিব আল হাসানও তুলে নিয়েছেন ফিফটি। এই তিনজনের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে 9 বল হাতে রেখেই বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যায়। দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয় মাশরাফি বিন মর্তুজা।

৫. নারী ক্রিকেট দলের এশিয়া কাপ জয়

বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দলের থেকে নারী ক্রিকেট দল যে কম যায় না তারা তারা দেখিয়ে দিয়েছে ২০১৮ ওমেন্স এশিয়া কাপে। এটা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সবথেকে বড় অর্জন। পুরুষ দল এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপ জিততে পারেনি কিন্তু নারী দল তা করে দেখিয়ে দিয়েছে ।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ছয়টি অর্জন

Celebrating moment before  winning

কুয়ালালামপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। সালমা খাদিজা এবং রুমানার অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্সে ২০ ওভারে ১১২ রান তুলতে সক্ষম হয় ইন্ডিয়া। ১১৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে আয়েশা, নিগার সুলতানা এবং রুমানার ছোট ছোট কেমিওতে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌছে যায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দুই রান স্ট্রাইকে থাকা জাহানারা আলম দুই রান তুলতে সক্ষম হয়ে যান। এবং বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয় লাভ করে। অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স ম্যাচসেরা রুমানা আহমেদ।

৬. ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড হারিয়ে কোয়াটার ফাইনাল খেলার গৌরব অজর্ন

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য দুর্দান্ত একটি জয় ছিল এই ম্যাচটি।
২০১৫ আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের ৩৩ নম্বর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড অ্যাভেলে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড।

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েসের উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
এরপরে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সৌম্য সরকার এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পার্টনারশিপে শত রানের গণ্ডি পার করে বাংলাদেশ। ৪০ রান করে সৌম্য সরকার আউট হাওয়ার পরে সাকিব আল হাসান ও দ্রুত আউট হয়ে ফিরে যান।
তারপরে মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম এই দুই ভায়রা ভাইয়ের জুটিতে ২৭৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এই ইনিংসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১০৩ এবং মুশফিকুর রহিম ৮৯ রান করেছেন।

২৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৫০ রানের ভালো সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। শতরানের গণ্ডি পার করার পর ধারাবাহিক ভাবে ইয়ান বেল, অ্যালেক্স হেলস, জো রুট এবং অধিনায়ক ইয়ন মরগানের উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে ইংলিশ ক্রিকেট দল।

তারপরে জশ বাটলার এবং ক্রিস ওয়াক্স ভালো পার্টনারশিপ জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
কিন্তু বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন এবং মাশরাফি বিন মর্তুজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ইংলিশ ব্যাটিং অর্ডার। ৪৮ তম ওভারে রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত ইয়র্কারে পরপর বোল্ড হয়ে স্টুয়ার্ড বোর্ড এবং জেমস অ্যান্ডারসন আউট হয়ে যায়। এবং সেইসাথে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ছয়টি অর্জন

Celebrating moment before  winning

দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এছাড়াও রুবেল হোসেন চারটি মাশরাফি মর্তুজা এবং তাসকিন আহমেদ দুটি করে উইকেট নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ গুলোর মধ্যে একটি। এই ম্যাচটি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আজীবন মনে রাখবে।

 

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগণ আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন

 

আরো পরুন

ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ এর মাধ্যমে কোন ক্রিকেট বোর্ড কত টাকা ইনকাম করে

 

টেক দুনিয়ার সর্বশেষ আপডেট পেতে লাইক দিন আমাদের ফেসবুক পেইজে এবং যুক্তহন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে ধন্যবাদ।