ইবিএল মাস্টার কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিত

দেশের বাইরে ভ্রমণ কিংবা অনলাইন কেনাকাটা করার আগে আমাদের যে জিনিসটা সবার আগে বেশি প্রয়োজন সেটি হল একটি প্রিপেইড মাস্টার কার্ড। আর এই ডুয়াল কারেন্সি মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয় একটি সুবিধা দাতা প্রতিষ্ঠান হলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।
প্রিয় পাঠক এবং পাঠিকাগণ সবাইকে সালাম জানিয়ে শুরু করছি আজকের এই আর্টিকেল!
আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের বিস্তারিত জানাবো ইবিএল মাস্টার কার্ড সম্পর্কে। ইবিএল মাস্টার কার্ড হলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের একটি প্রিপেইড ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। এই কার্ডটি অফিসিয়াল নাম হল ইবিএল একোয়া মাস্টারকার্ড।

আর্টিকেল সূচি

প্রিপেইড মাস্টারকার্ড কি?

প্রিপেইড মাস্টারকার্ড হলো এমন এক ধরনের কার্ড, এই কার্ডে আপনি চাইলে যেকোন সময় ব্যাংকে গিয়ে ডলার রিচার্জ করতে পারবেন এবং যে কোনো দেশি বিদেশি সাইটে অনলাইন পেমেন্ট করতে পারবেন।

এটিকি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড?

হ্যাঁ, এটি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড। এই কার্ডে বাংলাদেশী টাকা এবং ইউএস ডলার উভয়ই সাপোর্ট করে।

এই কার্ডটি নেওয়ার জন্য কি ব্যাংক একাউন্ট থাকা প্রয়োজন?

না, এই কার্ডটি নেয়ার জন্য কোনো ব্যাংক একাউন্ট থাকা লাগবে না। কোনো ব্যাংক একাউন্ট খোলা ছাড়াই আপনি ব্যাংক থেকে এই কার্ডটি নিতে পারবেন।

পাসপোর্ট ছাড়া এই কার্ডের সুবিধা নেওয়া সম্ভব?

না, পাসপোর্ট ছাড়া আপনি এই কার্ডের পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারবেন না। কার্ডের মধ্যে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে হলে অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট থাকা লাগবে। পাসপোর্ট ছাড়া শুধু বাংলাদেশি টাকায় সুবিধা নিতে পারবেন।

এনডোর্সমেন্ট কি?

এনডোর্সমেন্ট হল ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করার অনুমতি। কার্ড নেওয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে। এবং ব্যাংক অফিসার আপনার পাসপোর্ট এর পিছনের দিকে সিল মেরে দিবে এবং আপনি কত ডলার এনডোর্স করবেন সেটা লিখে দিবে।

একোয়া মাস্টারকার্ডে আমি সর্বোচ্চ কত ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে পারব?

সার্কভুক্ত দেশের জন্য সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার। এবং ননসার্কভুক্ত দেশের জন্য সর্বোচ্চ ৭ হাজার ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে পারবেন। সর্বমোট ১২ হাজার ডলার এন্ডোর্স করতে পারবেন।

সর্বনিম্ন কত ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করা যাবে?

এই কার্ডের সর্বনিম্ন এনডোর্সমেন্ট আর কোন লিমিট নেই। আপনি চাইলে ১ ডলারও এনডোর্স করতে পারবেন।

এই কার্ড দিয়ে কি আমি অনলাইন ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করতে পারব?

হ্যাঁ, এই কার্ড দিয়ে আপনি যেকোন অনলাইন ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করতে পারবেন তবে এর জন্য কার্ডে ই-কমার্স এনরোলমেন্ট থাকতে হবে।

এই কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কত?

এই কার্ডের বার্ষিক কোনো চার্জ নেই। তবে কার্ডটি আনার সময় আপনাকে ৩ বছরের চার্জ ৫০০ টাকা একসাথে দিতে হবে এবং সাথে ৭৫ টাকা ভ্যাট। মোট ৫৭৫ টাকা দিয়ে আপনাকে কার্ডটি আনতে হবে।

এই কার্ডে কি কোন হিডেন চার্জ আছে?

এই কার্ডে কোন হিডেন চার্জ নেই তবে ফোনে কার্ডের লেনদেনের এসএমএস অ্যালার্ট এর জন্য বছরে ২০০ টাকা চার্জ দিতে হবে।

এটি দিয়ে কি এটিএম বুথের উইদ্র করা যায়?

হ্যাঁ, এটি যেকোন মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথে সাপোর্ট করে।

দেশ এবং দেশের বাইরে এটিএম বুথের উইদ্র চার্জ কত?

ইস্টার্ন ব্যাংকের নিজস্ব এটিএম বুথ থেকে টাকা বা ডলার উত্তোলনের জন্য কোন চার্জ দিতে হবে না। তবে অন্যান্য মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করলে প্রতি ট্রানজেকশনে ২৫ টাকা করে চার্জ কাটবে।
এবং দেশের বাইরে মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ থেকে উইদ্র করলে প্রতি ট্রানজেকশনে ৩ ডলার করে চার্জ করবে।

কার্ডের ব্যালেন্স কিভাবে দেখবেন?

বেশ কয়েকটা পদ্ধতিতেই আপনি কার্ডের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। আপনি চাইলে ইবিএল এর কাস্টমার কেয়ারে কল দিয়ে জেনে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আপনার বাবার নাম মায়ের নাম এবং জন্মতারিখ।
এছাড়াও আপনি ইবিএল স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে সহজেই কার্ডের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে গুগোল প্লেস্টোর থেকে ইবিএল এর স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে। এবং রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এছাড়াও ইবিএলের ফেইসবুক পেজ EBL-DIA চ্যাটবট থেকে আপনি আপনার কার্ডের ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।

এই কার্ডের বিশেষ কিছু সুবিধা

১. ইস্টার্ন ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকেই আপনি এই কার্ড নিতে পারবেন।
২. যে কোন ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করতে পারবেন।
৩. ফেসবুক এবং ইউটিউব এ বুস্টিং করতে পারবেন।
৪. ব্যাংকে গিয়ে যে কোন সময় বিডিটি এবং ইউএসডি রিচার্জ করতে পারবেন।
৫. মাস্টার কার্ড সাপোটেদ যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা ডলার উইথড্র করতে পারবেন।
৬. ভ্রমণের সঙ্গী হিসেবে বিদেশে নিতে পারবেন এবং যেকোনো জায়গায় পেমেন্ট করতে পারবেন।
৭. প্রতিবার ডলার লোড করার সময় পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে না।
৮. যেকোনো ব্যক্তি চাইলে ব্যাংকে গিয়ে কার্ডে ডলার লোড করতে পারবে। কার্ড হোল্ডার এর প্রয়োজন হবে না।
৯. যেকোনো ধরনের ট্রানজেকশনের এলার্ট আপনি আপনার মোবাইলে এসএমএস পাবেন।
১০. ডলার রিচার্জ করার জন্য কোন অতিরিক্ত ফ্রি নাই।

কার্ডটি নিতে হলে যে যে ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে?

১.ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি
২. সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ল্যাব প্রিন্ট ছবি
৩. ডুয়েল কারেনসি সার্ভিসের জন্য অবশ্যই পাসপোর্ট নিতে হবে।
৪.ইউটিলিটি বিল এর ফটোকপি নিতে হবে। বিদ্যুৎ পানি গ্যাস বিল।
৫. তিন বছরের চার্জ ভ্যাটসহ 575 টাকা নিতে হবে।

একোয়া মাস্টারকার্ড টি পাওয়ার প্রসেস

একুয়া কার্ড টি মূলত দুই ধরনের। একটি হলো ইনস্টান এবং আরেকটি হলো কাস্টমাইজড।
ইনস্ট্যান্ট কার্ড নিলে আপনি সাথে সাথেই ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কার্ডের উপরে আপনার কোন নাম লেখা থাকবে না।
কাস্টমাইজ কার্ড টি পেতে হলে আপনাকে পাচ থেকে সাত দিন ওয়েট করতে হবে। কাস্টমাইজড কার্ডের উপরে আপনার নাম খোদাই করে লেখা থাকবে।
আপনার কার্ডটি ব্রাঞ্চে চলে আসলে ব্যাংক থেকে আপনাকে ফোন করা হবে অথবা ইমেইল করা হবে।

কার্ডটি ব্যবহারে যেসব ব্যাপারে আপনার সতর্ক থাকা প্রয়োজন

১. কোন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করার আগে বুঝে শুনে ব্যবহার করবেন। এবং অবশ্যই দেখবেন ওয়েবসাইটে এসএসএল সার্টিফিকেট আছে কিনা।
২. কার্ডের কোন ইনফরমেশন কখনোই কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
৩. কার্ডের পিছনের সিকিউরিটি কোড সবসময় মনে রাখবেন।
৪. কার্ডটি হারিয়ে গেলে হেল্পলাইনে কল দিয়ে অবশ্যই কার্ডি লক করে দিবেন।
৫. সব সময় ট্রাস্টেড ওয়েবসাইটে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।

কার্ডটির কিছু অসুবিধা

১. আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ফ্রিল্যান্সিং করা অর্থ এই কার্ডে পেমেন্ট আনতে পারবেন না।
২. কার্ডের সমস্ত ইনফরমেশন কারণ হাতে চলে গেলেই সে চাইলেই কোডটি ইউজ করতে পারবে।
৩. ওয়েবসাইটে পেমেন্টের ক্ষেত্রে টু ফ্যাক্টর সিকিউরিটি নেই তাই আপনারা কার্ড নিয়ে বড়োসড়ো ঝুঁকি থেকেই যায়।

যে কোনো প্রয়োজনে ইবিএল হেল্পলাইন

১৬২৩০ (বাংলাদেশ থেকে)
+৮৮-০২-৮৩৩২২৩২ (বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে)

আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না

 

যুক্ত হন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল